New Age Spirituality ধারণা অনুযায়ী, আধ্যাত্মিক উন্নতির চূড়ান্ত ধাপে মানুষ নিজের শারীরিক দেহের বাইরে ভ্রমণ করতে পারে, এভাবে সে Cosmic Energy এর সাথে একীভূত হয়ে Cosmic Consciousness অর্জন করে। এই ধারণাগুলো হলো—
১. Astral Body বা Celestial Body (আত্মিক/ অদৃশ্য দেহ):
এটি হলো মানুষের আত্মা বা আধ্যাত্মিক দেহ (astral body), যা শারীরিক দেহ থেকে আলাদা হয়ে ভ্রমণ করতে পারে। তাদের ধারণা অনুযায়ী, এই ভ্রমণ আসলে শারীরিক দেহের বাইরে ঘটে না—এটি মানসিক, আধ্যাত্মিক বা চেতনার স্তরে ঘটে।
New Age তত্ত্বে বিশ্বাস করা হয় যে, মানুষ উচ্চ চেতনার অবস্থায় বা ধ্যানের মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
কখনও কখনও এটিকে Soul body, Energy body, Spirit body বা Subtle body নামেও ডাকা হয়। এই “body” দিয়ে মানুষ astral plane-এ ভ্রমণ করে।
২. Astral Plane (আত্মিক/ অদৃশ্য জগৎ) :
– Astral plane হলো এমন একটি পরিমণ্ডল বা মাত্রা, যেখানে সাধারণ মানুষ সরাসরি যেতে পারে না, কিন্তু astral body সেখানে যেতে পারে। এই plane-এ সময় ও স্থান আমাদের দৈহিক বাস্তবতার মতো সীমাবদ্ধ নয়।
– এর বিভিন্ন স্তর বা মাত্রা রয়েছে, যেমন lower astral, middle astral, higher astral।
– এখানে কিছু positive beings বা guidance spirits থাকতে পারে। একই সঙ্গে, negative energies বা spiritsও থাকতে পারে।
৩. Astral Travel বা Astral Projection (আত্মার ভ্রমণ):
Astral Travel মানে হলো – মানুষের আত্মা বা সূক্ষ্ম দেহ (astral body) শারীরিক দেহ থেকে আলাদা হয়ে Astral Plane এ ভ্রমণ করা। এই ধারণা অনুযায়ী, যখন কেউ গভীর ধ্যান (meditation), ট্রান্স বা ঘুমের অবস্থায় থাকে, তখন তার astral body মূল শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়।
এটাকে Out-of-body experience (OBE) ও বলা হয়। অর্থাৎ
শরীর শুয়ে থাকে, কিন্তু চেতনা অন্যত্র ভ্রমণ করে।
Astral Travel এর ধাপ:
New Age তত্ত্বে অনেক ধাপের পর astral travel সম্ভব বলে মনে করা হয়। সাধারণভাবে ধাপগুলো হলো—
1. Relaxation / Meditation: গভীর ধ্যান বা relaxation-এ যাওয়া, এভাবে মনের সব চাপ দূর করা।
2. Vibration / Energy Activation: শরীরের energy বা vibrations বাড়ানো। এমন অবস্থায় কিছু মানুষ হালকা কম্পন বা ঝনঝনানি অনুভব করে।
3. Separation of Astral Body: astral body বা আত্মিক দেহ তার শারীরিক দেহ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।
4. Exploration: Astral plane বা অদৃশ্য জগতে ভ্রমণ করা। এখানে অনুভূতি ও জ্ঞান বেশি প্রাধান্য পায়, শারীরিক ইন্দ্রিয় নয়।
5. Return: ভ্রমণ শেষে astral body পুনরায় শারীরিক দেহে ফিরে আসে।
Astral travel এর উদ্দেশ্য:
– Self Knowledge: নিজের চেতনা, কামনা, বাসনা, ক্রোধ, ভয়, আত্মাকে চেনা।
– Spiritual growth তথা আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা। Higher planes বা spirit guides এর সঙ্গে সংযোগ।
– Past life বা reincarnation এর অভিজ্ঞতা পাওয়া।
– Cosmic energy-এর সাথে যুক্ত হয়ে আত্মার মুক্তি অনুভব করা।
– Exploration of universe: Astral plane-এ বিভিন্ন mystical বা spiritual realms অন্বেষণ।
Astral Travel করার উপায়:
New Age spirituality-তে Astral Travel বা OBE (Out-of-body experience) নিয়ে অনেক রকম “টেকনিক” শেখানো হয়। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:
১. Meditation / Deep Relaxation:
শরীরকে সম্পূর্ণ শিথিল করে ধ্যান বা শ্বাসপ্রশ্বাসের কৌশল (breathing techniques) ব্যবহার করা হয়।
Hypnagogic (ঘুমের আগের অর্ধচেতন) অবস্থা আনতে বলা হয়।
২. Lucid Dreaming + Visualization:
স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা শেখা হয় (lucid dreaming)
তারপর “শরীর থেকে বের হওয়ার” কল্পনা করা হয়।
৩. Binaural Beats / Sound Frequencies:
বিশেষ সাউন্ড বা ফ্রিকোয়েন্সি শুনে মস্তিষ্কের তরঙ্গ ধীর করা হয় (Theta বা Delta wave state)।
৪. Psychedelics / Plant Medicine:
LSD, Ayahuasca, DMT ইত্যাদি হ্যালুসিনোজেনিক পদার্থ ব্যবহার করে “অন্য জগতের অভিজ্ঞতা” নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
৫. Occult Practices / Hindu Rituals:
কেউ কেউ ধূপ, মোমবাতি, সিগিল (চিহ্ন), mantra বা spirit guide ডাকাসহ “Occult” পদ্ধতিও ব্যবহার করে।
এগুলো আসলে আধ্যাত্মিক নয়, বরং শয়তানি প্রক্রিয়া।
Astral Travel করতে গিয়ে অনেকে “সুইসাইড” এর পথ কেন বেছে নেয়
– Astral Travel আসলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়; বরং এরা মানসিক অভিজ্ঞতা, হ্যালুসিনেশন, বা স্নায়ুবিক প্রভাবের কারণে হয়। মানসিক অসুস্থতা / হ্যালুসিনেশন, গভীর ধ্যান, ঘুমের ঘাটতি, psychedelic drugs — এগুলো মস্তিষ্কে ডিসোসিয়েশন তৈরি করে।
দীর্ঘ সময় করলে “ডিপারসোনালাইজেশন” ও “ডিরিয়ালাইজেশন” এর মত বিভ্রম তৈরি করে। ফলে
আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়।
– তাছাড়া New Age গুরুদের অনেকে বলে “Higher vibration-এ যেতে হলে Ego-কে মেরে ফেলতে হবে” — কেউ নিজেকে হত্যা (suicide) করে সেই আত্মিক মুক্তির পথ বেছে নেয়।
– বিশেষ করে Astral Travel এর যে উপায়গুলো, তার প্রায় সবগুলোই ইসলামে নিষিদ্ধ। যেমন-
√ গভীর ধ্যানের জন্য বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির মিউজিক ব্যবহার করা হয়, এই মিউজিক ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। মিউজিককে বলা হয় শয়তানের বাশি।
√ সাইকেডেলিক বা মাদক/ড্রাগ ব্যবহার করা হয়, এগুলো ইসলামে একেবারে হারাম। কারণ তা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক চিন্তা বিকৃত করে দেয়।
√ ধূপ, মোমবাতি, সিগিল ব্যবহার করা, কিংবা স্পিরিট ডাকা, মন্ত্র পড়া…. এগুলো মূলত ব্ল্যাক ম্যাজিক, শয়তানের পূজা বা স্যাটানিক ওয়ার্শিপেরই পার্ট। এগুলো ইসলামে একেবারে হারাম, ঈমান ধ্বংস করার মত বিষয়।
★★ এতগুলো হারাম কাজ, যেগুলো প্রত্যেকটা শয়তানের একেকটা শক্তিশালী অস্ত্র, এগুলো করা হয়, সেই মুহুর্তে শয়তান সর্বোচ্চ চেষ্টা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জাহান্নামে নিয়ে যেতে। শয়তানের আজন্ম উদ্দেশ্যই এটা- মানুষকে সামনে, পেছনে, ডানে, বামে সব দিক থেকে আক্রমণ করতে থাকা, মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া। যে মুহুর্তে মানুষ চরম হতাশায়, ডিলুউশনাল স্টেইটে, জীবনের অর্থ নিয়েও সে সন্দিহান, সেই মুহুর্তে এতগুলো শয়তানি কারসাজির মধ্য দিয়ে যেতে যেতে খুব সহজেই শয়তানের ফাদে পা দেয়।
★★ অনেক ক্ষেত্রে ঘোরের মধ্যে শয়তান স্বপ্নে বা অবচেতনে এসে এমন কিছু গাইড দিতে থাকে, যেটাকে ঐ মানুষটা মনে করে অদৃশ্য বা এঞ্জেলিক ফোর্স থেকে আসা গাইড। এই মুহুর্তেই শয়তান সুযোগ নিয়ে গাইড করে কারো ঈমান ধ্বংস করে ফেলে, কাউকে বলে তার আর নামায পড়তে হবেনা, সে আধ্যাত্মিকতার চূড়ায় পৌছে গেছে, কাউকে বোঝায় সে নিজেই গডের কাছাকাছি পৌছে গেছে, ঐশ্বরিক ক্ষমতা পেয়ে গেছে। ইতিহাসে অনেক ওলী আউলিয়াও এমন গভীর ধ্যানের সময় শয়তানের ওয়াসওয়াসায় ঈমান হারিয়েছে। আর কাউকে মহাজাগতিক কসমিক এনার্জির সাথে বিলীন হওয়ার সহজ উপায় হিসেবে সুইসাইড করার ওয়াসওয়াসা দেয়। সেই মুহুর্তে কেউ ঈমান হারায়, কেউ আধ্যাত্মিকতার নামে শয়তানের পূজা শুরু করে, কেউবা সুইসাইড করে দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই সাঙ্গ করে। নাউযুবিল্লাহ।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আরও কিছু ব্যাখ্যা:
1. Astral Travel (আত্মার ভ্রমণ):
– ইসলামী ধারণা অনুযায়ী, মানুষের আত্মা মৃত্যুর সময় দেহ থেকে বের হয়, কিন্তু Astral Travel (ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মা বের করা) তথা নিজেকে হত্যা করা হারাম।
– Astral travel-এর সময় শয়তান বা জিনের খপ্পরে পড়া, বিভ্রান্ত হওয়া ও ঈমান হারানোর সমূহ সম্ভাবনা।
2. মৃত্যুর ধারণা:
New Age Spirituality–তে মৃত্যুকে escape, অর্থাৎ “শরীরের সীমাবদ্ধতা থেকে আত্মার মুক্তি” বা “spiritual freedom” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এটিকে কষ্ট থেকে পালানোর বা higher realm–এ চলে যাওয়ার পথ হিসেবে দেখায়। কিন্তু ইসলামে মৃত্যু কোনো spiritual escape নয়, বরং—
i) আল্লাহর ইচ্ছায় নির্ধারিত সময়ের সমাপ্তি। পলায়ন নয়, অনিবার্য বাস্তবতা।
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ
“প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।”
(সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫)
ii) মৃত্যুর সময় আল্লাহ কর্তৃক সুনির্ধারিত।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
“প্রত্যেক জাতির জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাদের সময় এসে যায়, তখন তারা এক মুহূর্তও দেরি করতে বা এগিয়ে নিতে পারে না।”
(সূরা আল-আ‘রাফ ৭:৩৪)
iii) মৃত্যু escape নয়, বরং accountability–র শুরু। একটি পরীক্ষা শেষ হয়ে চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষা। রাসূল ﷺ বলেছেন:
القبر أول منازل الآخرة
“কবর হলো আখিরাতের প্রথম ধাপ।”
(তিরমিযী, হাদিস ২৪৬০)
iv) মৃত্যু মানে শেষ নয়, বরং দুনিয়া থেকে আখিরাতে যাত্রার সূচনা। এই নতুন পর্যায়ের নাম ‘বারযাখ’।দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, আখিরাতই চিরস্থায়ী।
وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
“আর নিশ্চয় আখিরাতের ঘরই হলো প্রকৃত জীবন—যদি তারা জানত।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৬৪)
3. Suicide (আত্মহত্যা):
কিছু New Age ধারণায় অনেক সময় আত্মহত্যাকে “spiritual liberation” হিসেবে দেখার চেষ্টা করে। বিপরীতে ইসলামে আত্মহত্যা স্পষ্টভাবে হারাম।
আল্লাহ বলেন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
“তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।” (সূরা আন-নিসা ৪:২৯)
রাসূল ﷺ বলেছেন:
مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ فَحَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا
“যে ব্যক্তি লোহার অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই অস্ত্র তার হাতে থাকবে, সে জাহান্নামের আগুনে তার পেটে তা চালাতে থাকবে এবং সেখানে চিরকাল থাকবে।” (সহিহ বুখারি ৫৭৭৮; সহিহ মুসলিম ১০৯)
আরেক বর্ণনায় এসেছে:
وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا
“যে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে ঝাঁপ দিতে থাকবে এবং সেখানে চিরকাল থাকবে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
————————-
এবার মিলিয়ে দেখুন তো, ২০২৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরাফাত সিয়াম নামের এক ছাত্র সুইসাইড করেছিলো, ঘটনাটা রিলেট করতে পারেন কিনা! তার টেবিলে সাধগুরুর ”মৃত্যু” নামে একটা বই পাওয়া গিয়েছিলো। তার বন্ধুরা জানিয়েছিলো, সে নিয়মিত মেডিটেশান করতো।
* আরাফাত সিয়াম এর সুইসাইড নোট:
