New Age Spirituality: ধ্বংসের শুরুটা যেখানে

নিউ এইজ স্পিরিচুয়ালিটি ধারণায় আধ্যাত্মিকতার পর্যায়ে অগ্রসর হওয়ার কিছু ধাপ আছে। চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই—

  1. Ego Dissolve :

New Age ধারণার বিশ্বাস, “আমাদের সত্তার মূল হলো মহাবিশ্বের শক্তির সাথে এক হওয়া।”

নিজের ইগো (আত্মপরিচয়) ভেঙে দেয়া। ‘আমি কে’ সেই অনুভূতি হারিয়ে গিয়ে cosmic oneness–এর সাথে মিশে যাওয়া।

Meditation, psychedelics ইত্যাদি ego dissolve করতে সাহায্য করে।

উদাহরণ:

– কোনো meditation retreat-এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, নিরবতা এবং শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষ মনে করে “আমি আর আলাদা নই, আমি মহাবিশ্বের একটি অংশ।”

– Extreme Yoga বা Kundalini practice-এ কিছু ব্যক্তি হঠাৎ মনে করে “আমার অস্তিত্ব নেই, সবই আলোর মধ্যে মিলেছে।”

~ ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

ইসলামে Ego dissolve মানে নয় নিজ সত্তা হারানো বা “কসমিক এনার্জিতে মিশে যাওয়া” নয়। বরং ইসলাম শেখায়— নফসের অহংকার ভাঙা এবং আল্লাহর সামনে বিনয়ী হওয়া। আল্লাহ বলেছেন:

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا

“পৃথিবীতে অহংকারের সাথে হেঁটো না; তুমি মাটি বিদীর্ণ করতে পারবে না, পাহাড়ের উচ্চতায়ও পৌঁছাতে পারবে না।” (সূরা আল-ইসরা ১৭:৩৭)

2. Higher Vibration ও Higher Awakening:

√ Higher Vibration:

New Age অনুযায়ী,

Positive energy → High vibration

Negative energy → Low vibration

মানুষ ধ্যান, crystal healing, chanting, light therapy, reiki, ইত্যাদির মাধ্যমে তার “vibration” বাড়াতে পারে, যা তার জীবনের মানকে উন্নত করে।

~ উদাহরণ:

– কেউ মনে করে, আমি আজ meditation করে 500Hz vibration-এ পৌঁছেছি, তাই আমার জীবন সবসময় শান্তিপূর্ণ হবে।

√ Higher Awakening / Enlightenment:

New Age বিশ্বাসে বলা হয়, meditation, energy work, crystals, higher vibration, Psychedelics ইত্যাদির মাধ্যমে “higher consciousness” বা “awakening” অর্জন করা সম্ভব। এই পর্যায়ে মানুষ…

– Universe-এর সাথে oneness অনুভব করে। নিজেকে মহাবিশ্বের অংশ হিসেবে অনুভব করে।

– মনের ভেতরে এক ধরনের “awakened state” পায়।

– সময় ও স্থানকে গুরুত্বহীন মনে হয়।

– মৃত আত্মাদের সাথে সংযোগ অনুভব করে।

~ উদাহরণ:

– কেউ মনে করে, “আমি এখন আর মানব সীমার মধ্যে নেই, আমি cosmic energy-র অংশ।”

– আবার কেউ হঠাৎ শারীরিক ব্যথা ভুলে গিয়ে গভীর আত্মিক প্রশান্তি বা হালকা trance-এ চলে যায়।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

ইসলামে Higher Awakening মানে মহাবিশ্বের সাথে বিলীন হয়ে যাওয়া নয়। বরং তা হলো হিদায়াত পাওয়া, দ্বীনের সঠিক বুঝ লাভ করা। আল্লাহ বলেন-

فَمَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا

“যাকে আল্লাহ হেদায়াত দেন, সে সত্যিকারের পথপ্রদর্শিত। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য তুমি কোনো উপদেশদাতা বা পথপ্রদর্শক পাবে না।” (সূরা হজ্জ ২২:৫৫)

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ

“আল্লাহই ঈমানদারদের বন্ধু; তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান।” (সূরা বাকারা ২:২৫৭)

3. Spirituality ও Psychedelics (আধ্যাত্মিকতা ও মাদক):

New Age spirituality ধারণা অনুযায়ী, Higher Awakening তথা উচ্চতর আধ্যাত্মিকতার পর্যায়ে পৌছার একটি মাধ্যম হচ্ছে সাইকেডেলিক এর ব্যবহার।

Psychedelics বলতে এমন কিছু বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বা ড্রাগকে বোঝায়, যেগুলো মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং চেতনা, অনুভূতি, চিন্তা, উপলব্ধি, ইন্দ্রিয়, এমনকি আত্মসচেতনতাও পরিবর্তন করে ফেলে।

এই ড্রাগগুলো সাধারণত hallucinogens বা ভ্রম-সৃষ্টিকারী মাদক নামে পরিচিত। কারণ এগুলো গ্রহণ করলে মানুষ বাস্তবের বাইরে ভ্রম (hallucination), রঙিন দৃশ্য, অদ্ভুত শব্দ শোনা, আত্মাকে শরীর থেকে আলাদা মনে হওয়া ইত্যাদি অভিজ্ঞতা করতে পারে।

Psychedelics-এর উদাহরণ:

– LSD (Lysergic acid diethylamide)

– Psilocybin (Magic mushrooms)

– Mescaline (Peyote cactus থেকে পাওয়া যায়)

– DMT (Dimethyltryptamine)

New Age অনুসারীরা Psychedelics-কে “doorway to higher consciousness” বা “spiritual awakening” এর মাধ্যম হিসেবে দেখে। তাদের বিশ্বাস, এই ড্রাগগুলো মানুষকে –

– Ego dissolve করতে সাহায্য করে (নিজেকে ভুলে যাওয়া)।

– Cosmic oneness অনুভব করায় (ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে একাত্ম হওয়া)।

– Astral travel বা mystical vision দিতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

ইসলামে মাদক, নেশাজাতীয় পদার্থ স্পষ্টভাবে হারাম। কারণ এগুলো—

1. আকল (বুদ্ধি) নষ্ট করে দেয়।

2. ইবাদতে বাধা সৃষ্টি করে।

3. পাপ ও হারাম কাজে প্রলুব্ধ করে।

আল্লাহ বলেছেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنْصَابُ وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

“হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারণের তীর — এগুলো শয়তানের কাজের অপবিত্র জিনিস। সুতরাং এগুলো থেকে দূরে থাকো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা মাইয়েদা 5:90)

রাসূল ﷺ বলেছেন,

مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ

“যা বেশি পরিমাণে নেশা সৃষ্টি করে, তার অল্প পরিমাণও হারাম।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: 3681)

4. Depersonalization & Existential Crisis:

“Higher Awakening” বা ego dissolve-এর চরম অবস্থায় মানুষ নিজেকে শরীর বা চিন্তার বাইরে মনে করতে শুরু করে।

এটি একটি মানসিক বা আধ্যাত্মিক অনুভূতি যেখানে মানুষ নিজেকে বিচ্ছিন্ন, অচেনা, বা নিজের শরীর/মন থেকে আলাদা মনে করে।

অনেকে জীবনের উদ্দেশ্য, অস্তিত্ব, “আমি কে?” এসব প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করে হতাশ হয়ে পড়ে।

উদাহরণ:

– একজন যুবক বহু ঘণ্টা meditation-এর পর হঠাৎ অনুভব করে, “আমার অস্তিত্ব নেই। আমি শুধু cosmic energy।”

– সে বুঝতে পারে জীবনের কোনো অর্থ নেই, এবং এই উপলব্ধি থেকে বিষণ্ণতা বা suicidal thought জন্ম নিতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

New Age ধারণায় এটিকে ego loss বা “spiritual awakening” বলে ধরা হলেও কিন্তু ইসলাম অনুযায়ী এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও নফসের ধোকা হতে পারে। কারণ, শয়তান মানুষের মনে সন্দেহ, ভয়, বিভ্রান্তি ও আত্ম-অজ্ঞতা জন্ম দেয়। এটি শুধু আধ্যাত্মিক নয়, মানসিক স্বাভাবিক অবস্থাও ব্যাহত করে।

Depersonalization-এর মতো অনুভূতিগুলো শয়তানের প্ররোচনার মাধ্যমে মনুষ্যকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

“শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যে চুপিসারে ওয়াসওয়াসা দেয় মানুষের বুকের মধ্যে, জিন ও মানুষের মধ্যে।” (সূরা নাস 114:4-6)

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا

“নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; তাই তাকে শত্রু মনে করো।” (বাকারা 2:225)

5. Cosmic Oneness & Suicidal Ideation:

New Age ধারণা অনুযায়ী, “আমি নেই, সবই Universe-এর অংশ।” এই ভাবনার চরম ক্ষেত্রে মানুষ মনে করতে পারে, “যদি আমি অস্তিত্ব হারাই, তাহলে আমি cosmic energy-র সাথে মিলিত হয়ে যাব।”

এই ধারণার ফলাফল হলো, Depression, Anxiety, Panic Attack, এবং কিছু ক্ষেত্রে Suicidal Attempt।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

– আল্লাহ সৃষ্টির সঙ্গে মিশে যান না; তিনি সর্বশক্তিমান এবং আলাদা।

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

“তাঁর মতো কিছুই নেই, আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা আশ-শুরা ৪২:১১)

– মানুষের রূহ, আত্মা বা জীবন আল্লাহর দান, আল্লাহর নেয়ামত। জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত ও আত্মার পরিশোধন, কিন্তু universe-এর অংশ হয়ে cosmic energy-এর সঙ্গে মিশে যাওয়া নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

“আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদতের জন্য।” (সূরা যারিয়াত, ৫১:৫৬)

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا

“যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম হয়।” (সূরা মুলক, ৬৭:২)

চলবে….. (ইনশাআল্লাহ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *