Watching….the latest movie!!

আচ্ছা, হারাম কাজ কি শুধু নিজে করলেই গুনাহ হয়??

এই ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই ধারণা ঘোলাটে। এজন্য নিজেরা কমবশি নিষিদ্ধ কাজগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও অন্য কোনভাবে হারামের অংশীদার হতে দ্বিধা করিনা।

সংক্ষেপে একটু বলি, হারাম কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়ার ৩ টি স্তর রয়েছে-

১। সরাসরি নিজে হারাম কাজ করা।
২। নিজে না করা, তবে অন্যকে হারাম কাজে সাহায্য করা।
৩। নিজেও না করা, অন্যকেও সাহায্য না করা, তবে কোন হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার কারণ (সাবাব) হওয়া।

~ ১ নং কাজগুলো- নিঃসন্দেহে হারাম। যেমন: যিনা(ব্যভিচার) করা, সুদ খাওয়া, সুদী ব্যাংকে চাকুরি করা, ঘুষ খাওয়া, গান বাজনা শোনা ইত্যাদি।

~ ২ নং কাজগুলোকে ফিক্বহের ভাষায় বলা হয়- الإعانة على المعصية বা ‘পাপকাজে সহযোগিতা’। এগুলোও হারাম, কারণ কুরআনে আল্লাহ পাপকাজের সহযোগী হতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

উদাহরণ কয়টা দিবো? অসংখ্য, অগণিত।
নিজে একটা ম্যুভি দেখলাম, বন্ধুর রুমে নিজে কষ্ট করে গিয়ে বলে আসলাম- ‘দোস্ত, হেব্বি একটা মুভি দেখছি। এই নে, পেনড্রাইভে নিয়ে আসছি। এক্ষণি দেখ, নাইলে মিস করবি।’ আহ! কি সহজে নিজের গুনাহ ডাবল বানিয়ে ফেললাম! (না’ঊযুবিল্লাহ)

প্রতিবেশী বিয়েতে গান-বাজনা করবে, ওদের সাউন্ডবক্সটা ভালোনা। এগিয়ে গিয়ে নিজের হাই-কোয়ালিটি সাউন্ডবক্সটা দিয়ে এলাম, তাদের হেল্প হবে। আহ! কত্তগুলো মানুষের গুনাহ একদম ফ্রি-তে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম!

বন্ধু লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য ফ্ল্যাট পাচ্ছেনা, নিজের ফাকা বাসাটা দিয়ে দিলাম- বন্ধুর জন্য সব করা যায়!

আর সবচে’ কমন উদাহরণ হলো- আপনি নিজে ফেইসবুকে ছবি আপ্লোড করেন না। কিন্তু আপনারই এক বান্ধবী সুন্দর সেজেগুজে ছবি আপ্লোড দিলো, কিংবা বিয়ের সাজে আধা-হিজাব, কোয়ার্টার-হিজাবে কিংবা বেপর্দা ছবি দিলো, আপনি গিয়ে কমেন্ট করলেন- মা শা আল্লাহ! খুব কিউট লাগছে! অথবা তা-ও করলেন না, কিন্তু ছবিটাতে একটা লাইক অথবা লাভ রিএকশান দিলেন। তার মানে কী হলো? নিজে যে হারাম কাজটা করেন না, অন্যকে সেই হারামে উৎসাহ যোগালেন, সে উৎসাহী হয়ে আরও দ্বিগুণ ‘কিউট’ একটা ছবি আপ্লোড দিলো। ফ্রি ফ্রি হারামের গুনাহ কামাই করে নিলেন!

~ ৩ নং কাজগুলোকে ফিক্বহের পরিভাষায় বলা হয় تسبب বা কারণ হওয়া। এই কাজগুলো ৪ ধরণের হয়ে থাকে-

ক) কাজটি পাপকাজটির শক্তিশালী একটি মাধ্যম হওয়া, যার অনুপস্থিতিতে পাপকাজটি সংঘটিত হতোনা। এই কাজগুলোও হারাম।

যেমন- অন্যধর্মের দেবতাদের গালি দেয়া, ফলে তারাও আল্লাহকে গালি দিয়ে বসবে, মেয়েদের অশ্লীল পোশাক পরে রাস্তায় বের হওয়া যা খারাপ পুরুষদের কুপ্রবৃত্তিকে উস্কে দেবে, পর্ণ ভিডিও তৈরি করা ইত্যাদি।

খ) কাজটি পাপকাজের একমাত্র শক্তিশালী মাধ্যম নয়, তবে কাজটি মাধ্যমে পাপ কাজ সংঘটনে সহায়ক হবে। এই কাজগুলো মাকরূহে তাহরীমি, অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি। আর ইচ্ছাকৃতভাবে পাপকাজের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে করা হলে তা হারাম হয়ে যাবে।

যেমন- সুদি ব্যাংক করার জন্য বাড়ি ভাড়া দেয়া, মদের বারের জন্য দোকান ভাড়া দেয়া, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা ইত্যাদি।

খুব কমন আরেকটি উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন- আপনি একটা মিউজিক্যাল হারাম গান শুনে স্ট্যাটাস দিয়ে দিলেন- listening omuk song. কিংবা একটা হারাম ম্যুভি দেখে পোস্ট দিলেন- watching tomuk movie. আপনাকে দেখে উৎসাহী হয়ে আরও দশজন মানুষ ঐ হারাম কাজটা করলো। আপনি তাদেরকে দিয়ে হারাম কাজ করাননি, কিন্তু অবশ্যই তাদের হারাম কাজের ‘কারণ’ হয়ে দাড়ালেন। হারামের কাছাকাছি মাকরূহ তাহরীমির গুনাহ পেয়ে গেলেন। (নাউযুবিল্লাহ)

গ) এই ধরণের কাজের মাধ্যমে সরাসরি পাপকাজ করা যাবেনা, পাপ কাজ ঘটাতে হলে আরও কাজ করতে হবে, যাতে উক্ত কাজটি সহায়ক হবে। এই কাজগুলো পাপের দূরবর্তী কারণ। এগুলো মাকরূহে তানযিহি। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।

যেমন- ফিৎনাবাজদের নিকট লোহা বিক্রি করা, সুদী ব্যাংকের মালিকদের নিকট কম্পিউটার বিক্রি করা।

ঘ) এই কাজের সাথে পাপকাজের সম্পর্কটা অনেক দূরের, কাজটি পাপের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোন মাধ্যমই নয়। এই ধরণের কাজ পুরোপুরি বৈধ।

যেমন- মুদি দোকানের জন্য দোকান ভাড়া দিলেন, যেখান থেকে সুদখোরও খাবার দাবার কিনবে (তবে বিড়ি-সিগারেট-মাদকদ্রব্য বিক্রি করলে তা অবশ্যই হারাম হবে)। ঐ সুদখোরের সুদে দোকানদারের সংশ্লিষ্টতা নেই।

 এই জায়গাটি নিয়ে আমাদের সমাজে বড় রকম একটা কনফিউশান আছে। অনেকেই ভুল করে এ ধরণের কাজকেও পাপ মনে করে, আর বলে- ★ সুদ থেকে তো এ যুগে বাচা সম্ভব নয় ★। তারা বলবে, হালাল প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন, কিন্তু বেতন তো ব্যাংক থেকেই আসছে। গাড়িতে উঠবেন, গাড়িতো সুদী লোনেই কেনা হয়েছে৷ বাড়ি ভাড়া নেবেন, বাড়ির মালিক তো সুদী লোন নিয়েই বানিয়েছে। মোদ্দাকথা, পায়ে পায়ে সুদের সম্ভাবনা, কোনভাবেই সুদ থেকে বাচা সম্ভব নয়। তাই সুদী ব্যাংকে টাকা রাখলে বা সুদী ব্যাংকে চাকুরি করলে আর কী সমস্যা? পুরো সমাজই তো সুদের মধ্যে নিমজ্জিত….. এই ধারণা একটা স্পষ্ট ভ্রান্তি। সুদ সমাজে যেমন ছড়িয়ে আছে, তেমনি তা থেকে বাচার উপায়ও আছে। সুদ তো সমাজে সেই যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে, কিন্তু প্রত্যেক সমাজেই সুদ থেকে বেচে থাকার উপায়ও আল্লাহ বাতলে দিয়ে গেছেন। কিভাবে বেচে থাকতে পারবো, তা আলেম-উলামাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। তাই শয়তানের এই ওয়াসওয়াসায় কোনভাবেই কান দেয়া যাবেনা যে- সুদ থেকে তো বাচা সম্ভবই না।

আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন।

(মূল তথ্য Islamic Finance Academy এর লেকচার থেকে নেয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *